রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক:
অনেকেই আছেন পরীক্ষা, স্কুল খোলা, কষ্ট হবে, বাচ্চা মানুষ, ইত্যাদি বলে বাচ্চাদের রোজা রাখতে দেন না। ফলে বাচ্চাদের অভ্যাস তৈরি হয় না। এমনকি বড় বাচ্চারাও আজকাল রোজা রাখে না। আমার মনে আছে, আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন দিনে দুটো রোজা রাখতাম। সকাল থেকে দুপুর, আবার দুপুর থেকে ইফতার পর্যন্ত। রোজা না থাকলেও ইফতারের আয়োজন আগেভাগে খাওয়া নিষেধ ছিল। ইফতারে একসঙ্গে সবার সঙ্গে বসে খেতে হবে। আব্বু ইফতার শুরুর কয়েক মিনিট আগে খাবার সামনে নিয়ে দোয়া করতেন। আমরাও বসে দোয়া করতাম।
এটা ঠিক যে, হুট করে কোনো বাচ্চা সবগুলো রোজা রাখতে পারবে না। তাই একদম প্রথম রোজা, শুক্রবারের রোজা, আর শেষ রোজাটা রাখার জন্য তাদের উৎসাহ দেওয়া। এরপরের বছর রোজার সংখ্যা বাড়াতে থাকা। এভাবেই অভ্যাস হয়ে যাবে।
যেদিন বাচ্চারা রোজা রাখবে, সেদিন তাদের প্রিয় খাবারগুলো ইফতারের মেন্যুতে রাখার চেষ্টা করা। রোজার বিনিময়ে আল্লাহ তাদের কী দেবেন, সে ব্যাপারে আলোকপাত করা। রমজান শেষে আপনি নিজেও তার জন্য একটা সারপ্রাইজ গিফট দিতে পারেন, কিংবা রমজানের শুরুতেই সারপ্রাইজ গিফটের কথা জানিয়ে রাখুন। তাহলে বাচ্চারা আনন্দ করে, খাওয়া দাওয়া করে, খেলতে খেলতে রোজাপালনে অভ্যস্ত হবে। এভাবে ইবাদত যে উপভোগের একটা বিষয়, এটা তারা নিজের অজান্তে শিখে যাবে।
রমজান মাসে ছোট যেকোনো একটি সুরা আপনি নিজেও মুখস্থ করুন, সন্তানকেও মুখস্থ করান। কে আগে মুখস্থ করতে পারে, তার প্রতিযোগিতা করুন। যেকোনো ছোট দোয়াও মুখস্থ করতে পারেন। মুখস্থ করর জন্য আলাদা গিফট দিন। বাচ্চাকে বুঝাতে হবে, গিফটা লোভ দেখানোর জন্য না, এটা আসলেই তার পাওনা, কারণ সে কষ্ট করে মুখস্থ করেছে, আর আসল গিফট পরকালে আল্লাহর কাছ থেকে পাবে।
তারাবির নামাজ পড়ার সময় সন্তানকেও সঙ্গে নিয়ে বসুন। দান-সদকা বেশি বেশি করুন, বাচ্চাদের সামনে এবং সঙ্গে নিয়ে করুন, ফলে তারা আপনার কাছ থেকে দেখে শিখবে।
আগে রোজার সময় খাবার দোকান বেশিরভাগ বন্ধই থাকত। এখন কিছু দোকান খোলা থাকে, তবে সেগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে খাবার বিক্রি করে। অনেকের সমস্যা থাকতে পারে, তাই মানুষজন নিজেকে আড়াল করেই রমজানে খায়। কিন্তু ইদানীং রোজা না রেখে অনেকেই সবার সামনেই খাওয়া-দাওয়া করে। ফলে রোজার যে ভাবগাম্ভীর্য আছে, সেটা থাকে না। রোজার মাসে আপনার বাচ্চাকে মার্কেটে নিয়ে গিয়ে, খুব প্রয়োজন না থাকলে সবার সামনে খাওয়াবেন না। এটাও যে এক ধরনের শিষ্টাচার সেটা শেখাবেন। তার লজ্জা ভাঙবেন না।
ইফতারের আগে আগে খাবার সামনে নিয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে বসে দোয়া করুন। দোয়া কবুলের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কে কাজে লাগান, বাচ্চাদেরও কাজে লাগানো শেখান। রোজা রাখুক বা না রাখুক, ইফতারের আগে যেন কেউ খাবার না খায়, সেটা শেখান। আগেই ঈদের কেনাকাটা শেষ করার চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে কাজটা করুন। ফলে রমজান মাসে ইবাদতের সময় বেশি পাবেন। এই ব্যাপারটা বাচ্চাদের বুঝিয়ে দিন।
আশা করা যায়, বড় হতে হতে এটাও তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। ছোট বলে ভাববেন না যে তারা বুঝবে না। তারা অনেক কিছুই বুঝে। নিজেকে দিয়ে বিচার করুন। আপনি যখন ছোট ছিলেন, তখন কি অনেক কিছু বুঝেননি? কেউ দেখুক বা না দেখুক, আল্লাহ যে সব দেখছেন, আল্লাহর কাছে যে কিছুই লুকানো যায় না, এই ব্যাপারটা সবচেয়ে সহজে রোজার সময়েই শেখানো যায়। তাই এই সময়ের সদ্ব্যবহার করুন।
ভয়েস/আআ